Vivo Y27s একটি বাজেট-ফ্রেন্ডলি স্মার্টফোন, যা ৭ নভেম্বর ২০২৩ সালে বাজারে এসেছে। এই ফোনটি তাদের জন্য তৈরি যারা ভালো ডিজাইন, বড় ব্যাটারি এবং নির্ভরযোগ্য পারফরম্যান্স খোঁজেন সাধ্যের মধ্যে। এতে রয়েছে ৮ জিবি র্যাম এবং ১২৮ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ, যা স্বাভাবিক ব্যবহার, গেম খেলা এবং অ্যাপ চালানোর জন্য যথেষ্ট।
৬.৬৪ ইঞ্চি বড় ফুল এইচডি+ ডিসপ্লে, ৫০+২ মেগাপিক্সেল রিয়ার ক্যামেরা এবং ৮ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা থাকায় ছবি তোলার অভিজ্ঞতাও বেশ ভালো হবে। ৫০০০ এমএএইচ ব্যাটারি ও ৪৪ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সুবিধা থাকার কারণে ফোনটি দীর্ঘ সময় ব্যবহার করা যাবে সহজে। এছাড়াও এতে IP54 স্প্ল্যাশ প্রুফ, গরিলা গ্লাস, এবং ব্লুটুথ ৫.০-এর মত কিছু আধুনিক ফিচারও রয়েছে।
ভিভো Y27s এর দাম কত বাংলাদেশে
ভিভো Y27s এই মোবাইলটি আশা করা যাচ্ছে, বাংলাদেশের মার্কেটে অফিসিয়াল ভাবে এর দাম ২২,৯৯৯৯ টাকার মত।
Vivo Y27s ওভারভিউ
Vivo Y27s হলো Vivo ব্র্যান্ডের একটি দুর্দান্ত মিড-রেঞ্জ স্মার্টফোন, যা ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর বাজারে এসেছে। যারা একটি নির্ভরযোগ্য, স্টাইলিশ এবং ফিচার-সমৃদ্ধ ফোন খুঁজছেন তাদের জন্য এটি হতে পারে একটি চমৎকার পছন্দ। মাত্র ২২,৯৯৯ টাকায় পাওয়া এই ফোনটি দামে যেমন সাশ্রয়ী, তেমনি ফিচারেও যথেষ্ট আধুনিক।
প্রথমেই বলি এর ডিসপ্লে নিয়ে। Vivo Y27s-এ আছে ৬.৬৪ ইঞ্চির ফুল এইচডি+ IPS LCD স্ক্রিন যার রিফ্রেশ রেট ৯০ হার্জ। এই কারণে স্ক্রলিং, ভিডিও দেখা কিংবা গেম খেলা অনেক বেশি মসৃণ ও চোখ-সুলভ হয়। ডিসপ্লেতে গরিলা গ্লাসের সুরক্ষা থাকায় এটি সহজে স্ক্র্যাচ পড়ে না এবং কিছুটা শক্তিশালীও।
পারফরম্যান্সের কথা বললে, এই ফোনে ব্যবহার করা হয়েছে Qualcomm Snapdragon 680 প্রসেসর, যা একটি শক্তিশালী ৬ ন্যানোমিটার প্রযুক্তির চিপসেট। এর সঙ্গে ৮ জিবি LPDDR4X র্যাম থাকায় মাল্টিটাস্কিং, অ্যাপ চালানো এবং হালকা থেকে মাঝারি গেমিং খুব সহজে করা যাবে। স্টোরেজেও কোনো সমস্যা নেই, কারণ এতে আছে ১২৮ জিবি UFS 2.2 স্টোরেজ এবং চাইলে মাইক্রোএসডি কার্ডের মাধ্যমে ১ টেরাবাইট পর্যন্ত বাড়ানো যায়।
ফটোগ্রাফি যারা পছন্দ করেন তাদের জন্য রয়েছে ৫০ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি ক্যামেরা ও ২ মেগাপিক্সেলের ডেপ্থ সেন্সর। এতে রয়েছে LED ফ্ল্যাশ, অটো ফোকাস, HDR, এবং ডিজিটাল জুম-এর মত নানা ফিচার। সেলফির জন্য রয়েছে ৮ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা, যা দিয়ে ভালো মানের ছবি ও ভিডিও তোলা সম্ভব।
ব্যাটারি ব্যাকআপও অনেক ভালো। এতে আছে ৫০০০ এমএএইচ লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি, যা সহজেই একদিন বা তার বেশি সময় চালাতে সক্ষম। সেই সঙ্গে আছে ৪৪ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সুবিধা, যা মাত্র ১৫ মিনিটে ৩০% পর্যন্ত চার্জ দিতে পারে। ফলে দ্রুত চার্জ হয়ে যাওয়ায় ফোনটি ব্যস্ত জীবনেও ভালো সঙ্গী হতে পারে।
ডিজাইন এবং বিল্ড কোয়ালিটি দিক থেকেও ফোনটি বেশ ভালো। এর ওজন ১৯২ গ্রাম এবং মোটা ৮.১ মিমি, ফলে হাতে বেশ ভালোভাবে ধরতে সুবিধা হয়। ফোনটির ব্যাক অংশটি প্লাস্টিকের হলেও এর ডিজাইন প্রিমিয়াম লুক দেয়। এটি দুটি রঙে পাওয়া যায়: Burgundy Black ও Garden Green। সাথে আছে IP54 রেটিং, যা ফোনকে ধুলা ও পানির ছিটা থেকে আংশিক সুরক্ষা দেয়।
নিরাপত্তা ফিচার হিসেবে এতে রয়েছে সাইড-মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এবং ফেস আনলক সাপোর্ট। কানেক্টিভিটির দিক থেকেও রয়েছে Wi-Fi 5, Bluetooth 5.0, USB Type-C, এবং ৩.৫ মিমি হেডফোন জ্যাক। এছাড়াও NFC ও FM রেডিওর মত ফিচার থাকায় এটি অনেকের জন্য কার্যকরী হবে।
Vivo Y27s এর সম্পূর্ণ স্পেসিফিকেশন
ক্যাটাগরি | বিবরণ |
---|---|
মডেল | Vivo Y27s |
রিলিজ তারিখ | ৭ নভেম্বর ২০২৩ |
মূল্য (বাংলাদেশে) | ৳২২,৯৯৯ (৮GB + ১২৮GB) |
অপারেটিং সিস্টেম | Android 13 (Funtouch OS 13) |
চিপসেট | Qualcomm Snapdragon 680 (6nm) |
সিপিইউ | অক্টা-কোর (4×2.4 GHz + 4×1.9 GHz Kryo 265) |
জিপিইউ | Adreno 610 |
র্যাম | ৮ জিবি LPDDR4X |
ইন্টারনাল স্টোরেজ | ১২৮ জিবি (UFS 2.2) |
মেমোরি কার্ড | মাইক্রোএসডি কার্ড সাপোর্ট (১ টেরাবাইট পর্যন্ত) |
ডিসপ্লে আকার | ৬.৬৪ ইঞ্চি IPS LCD |
রেজোলিউশন | 1080 × 2388 পিক্সেল (FHD+) |
রিফ্রেশ রেট | ৯০ হার্জ |
স্ক্রিন সুরক্ষা | কর্নিং গরিলা গ্লাস |
উজ্জ্বলতা | ৬৫০ নিট |
স্ক্রিন ডিজাইন | পাঞ্চ-হোল, বেজেল-লেস |
পেছনের ক্যামেরা | ৫০ MP (f/1.8) + ২ MP (ডেপ্থ) |
সামনের ক্যামেরা | ৮ MP (f/2.0) |
ভিডিও রেকর্ডিং | 1080p @ 30fps (সামনে ও পেছনে) |
ফ্ল্যাশ | LED Flash |
ক্যামেরা ফিচার | HDR, ডিজিটাল জুম, ফেস ডিটেকশন, টাচ টু ফোকাস |
ব্যাটারি | ৫০০০mAh Li-Ion (অপসারণযোগ্য নয়) |
চার্জিং | ৪৪W ফ্ল্যাশ চার্জ (৩০% চার্জ ১৫ মিনিটে) |
USB টাইপ | USB Type-C 2.0 |
সিম টাইপ | ডুয়াল সিম (ন্যানো + ন্যানো) |
নেটওয়ার্ক | 2G, 3G, 4G (VoLTE সাপোর্ট) |
Wi-Fi | Wi-Fi 5 (802.11 a/b/g/n/ac), ৫GHz |
Bluetooth | ভার্সন ৫.০ |
GPS | A-GPS, Glonass |
NFC | আছে |
FM রেডিও | আছে |
অডিও জ্যাক | ৩.৫ মিমি |
লাউডস্পিকার | আছে |
ফিঙ্গারপ্রিন্ট | সাইড-মাউন্টেড |
ফেস আনলক | আছে |
অন্যান্য সেন্সর | Accelerometer, Proximity, Light, Compass, Gyroscope |
বডির উপাদান | প্লাস্টিক ব্যাক |
মাত্রা ও ওজন | ১৬৪ × ৭৬.১ × ৮.১ মিমি, ১৯২ গ্রাম |
ডাস্ট ও স্প্ল্যাশ রেজিস্ট্যান্স | IP54 সার্টিফায়েড |
রঙ | Burgundy Black, Garden Green |
অতিরিক্ত ফিচার | OTG সাপোর্ট, Mass storage, USB Charging |
ভালো দিকগুলো
Vivo Y27s ফোনটির সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে এর ব্যাটারি ও চার্জিং সিস্টেম। এতে ৫০০০ এমএএইচ বড় ব্যাটারি আছে, যা 하루 বা তার বেশি সময় অনায়াসে চালানো যায়। আর ৪৪ ওয়াট ফাস্ট চার্জ থাকায় খুব দ্রুতই ফোন চার্জ হয়ে যায়—ব্যস্ত সময়ে এটা খুবই দরকারি।
এর পর যে জিনিসটা ভালো লেগেছে সেটা হলো ডিসপ্লে। ৬.৬৪ ইঞ্চির বড় স্ক্রিন, ফুল এইচডি+ রেজোলিউশন এবং ৯০ হার্জ রিফ্রেশ রেট—সব মিলিয়ে ভিডিও দেখা, ফেসবুক স্ক্রল বা গেম খেলার অভিজ্ঞতা অনেক মসৃণ ও সুন্দর।
এই ফোনে ৫০ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা আছে, যেটা দিয়ে দিনের আলোতে ভালো মানের ছবি তোলা যায়। আর সামনে আছে ৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা, যেটা সেলফি বা ভিডিও কলে ভালো কাজ করে।
প্রসেসর হিসেবে Snapdragon 680 মাঝারি মানের হলেও সাধারণ ব্যবহার যেমন ফেসবুক, ইউটিউব, হালকা গেম, মাল্টিটাস্কিং ইত্যাদিতে খুব ভালো চলে। সাথে ৮ জিবি র্যাম ও ১২৮ জিবি স্টোরেজ থাকায় জায়গার অভাব হয় না।
আরও একটা ভালো দিক হলো ফোনটি IP54 রেটিংযুক্ত, মানে ধুলাবালি আর হালকা পানির ছিটা থেকে কিছুটা সুরক্ষিত। সাথে আছে সাইডে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ও ফেস আনলক—দুটোই খুব দ্রুত কাজ করে।
দুর্বল দিকগুলো
এই ফোনে ৫জি সাপোর্ট নেই, তাই যারা ভবিষ্যতের দ্রুতগতির নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে চান, তাদের জন্য এটা একটা কমতি।
রাতের বেলা বা কম আলোতে ছবি তুললে ক্যামেরার পারফরম্যান্স একটু দুর্বল লাগে। কারণ এতে নাইট মোড বা কোনো অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন (OIS) নেই।
আরেকটা বিষয় হলো এর ব্যাক পার্টটা প্লাস্টিকের। হাতে ধরলে প্রিমিয়াম একটা অনুভুতি পাওয়া যায় না। অনেকেই হয়ত গ্লাস বা মেটাল ফিনিশ পছন্দ করেন, সেখানে এটা একটু পিছিয়ে।
প্রসেসরটা যদিও ভালোই পারফর্ম করে, তবে যারা হেভি গেম খেলেন, তাদের জন্য এটা যথেষ্ট না হতে পারে। কারণ এই চিপসেটটি গেমিংয়ের জন্য একদম ফোকাসড নয়।
ব্যাটারি ও চার্জিং অভিজ্ঞতা
এই ফোনের ব্যাটারি অনেক ভালো পারফর্ম করবে। দিনে অনেকক্ষণ ফোনে কাটালেও একবার চার্জে পুরো দিন চলবে। যারা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফেসবুক, ইউটিউব, হালকা গেম বা কল ব্যবহার করেন, তাদের জন্য চার্জ খুব একটা সমস্যা হবে না।
আর ৪৪ ওয়াট ফাস্ট চার্জ থাকায় অল্প সময়েই ফোন চার্জ হয়ে যাবে — এটা অনেকের জন্য বিশাল সুবিধা।
ডিসপ্লে ও ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতা
৬.৬৪ ইঞ্চির বড় স্ক্রিন ও ফুল এইচডি+ রেজোলিউশন থাকায় ভিডিও দেখা, সোশ্যাল মিডিয়া চালানো বা ওয়েব ব্রাউজ করার অভিজ্ঞতা হবে খুবই ভালো।
৯০ হার্জ রিফ্রেশ রেটের জন্য স্ক্রল করা বা অ্যাপের মধ্যে নেভিগেট করাও হবে মসৃণ ও সাবলীল।
যারা সিনেমা বা সিরিজ বেশি দেখেন, তারা এই ডিসপ্লেতে বেশ সন্তুষ্ট থাকবেন।
ক্যামেরা ব্যবহারের অভিজ্ঞতা
ভালো আলোতে ছবি তুললে ক্যামেরার মান ভালো হবে — ছবি পরিষ্কার, ডিটেইলস সহ আসবে।
সেলফি বা ভিডিও কলের জন্য সামনের ক্যামেরাটিও যথেষ্ট ভালো।
তবে রাতের বেলা বা অল্প আলোয় তোলা ছবিতে শার্পনেস ও ক্লিয়ারনেস কিছুটা কম হতে পারে। যারা ক্যামেরা দিয়ে খুব বেশি এক্সপেরিমেন্ট করেন, তারা সীমাবদ্ধতা টের পেতে পারেন।
পারফরম্যান্স ও গেমিং অভিজ্ঞতা
Snapdragon 680 চিপসেট এবং ৮ জিবি র্যাম থাকার কারণে নরমাল অ্যাপ চালানো, একাধিক অ্যাপ একসাথে খোলা, কিংবা হালকা থেকে মাঝারি গেম খেলা বেশ স্মুথ হবে।
তবে যারা Pubg, COD বা Genshin Impact-এর মতো হেভি গেম খেলেন, তারা মাঝেমধ্যে একটু ল্যাগ বা গরম হওয়ার অভিজ্ঞতা পেতে পারেন।
নিরাপত্তা ও ইউজার ইন্টারফেস
ফোনে আছে সাইডে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এবং ফেস আনলক — দুটোই দ্রুত কাজ করে।
Vivo-এর Funtouch OS 13 ইন্টারফেস বেশ পরিচ্ছন্ন, ব্যবহার করা সহজ এবং কাস্টমাইজ করার সুবিধা ভালো। নতুন ইউজাররাও সহজেই বুঝে যাবেন কীভাবে কী করতে হবে।
সাউন্ড ও মাল্টিমিডিয়া অভিজ্ঞতা
লাউডস্পিকার ও ৩.৫ মিমি হেডফোন জ্যাক থাকায় গান শোনা বা ভিডিও দেখা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। FM রেডিও থাকায় অনেকেই খুশি হবেন যারা রেডিও শোনেন।
উপসংহার
Vivo Y27s একটি ব্যালেন্সড স্মার্টফোন, যেটি বাজেট ও পারফরম্যান্সের দিক থেকে মাঝারি মানের ব্যবহারকারীদের জন্য আদর্শ। এই ফোনটির শক্তিশালী ব্যাটারি, সুন্দর ডিজাইন, ভালো মানের ডিসপ্লে এবং নির্ভরযোগ্য ক্যামেরা সেটআপ—সব মিলিয়ে এটি একটি কার্যকর এবং টেকসই ডিভাইস হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
Snapdragon 680 প্রসেসর ও ৮ জিবি র্যাম থাকায় দৈনন্দিন ব্যবহারে কোনো ধরণের সমস্যার সম্ভাবনা কম। যারা সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিও দেখা, ছবি তোলা এবং মাঝারি মানের গেম খেলেন, তারা এই ফোন থেকে ভালো পারফরম্যান্স পাবেন। সেইসাথে ৪৪ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং এবং IP54 রেটিং থাকায় ব্যবহারকারীদের জন্য এটি আরও সুবিধাজনক ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।